উপন্যাস:ফাল্গুন,
কলমে:প্রিয়াংকা নিয়োগী,
পুন্ডিবাড়ী,ভারত,
তারিখ:26.09.2022
__________________
চারদিকে ছুটছে সবাই।ছুটছে সবকিছু।ছুটছে তার মাঝে ভোলানাথ বাবু।ভীষণ নিরিবিলি মানুষ।পরকে আপন করে নিতে জানে ভালো করে,সে পুরুষই হোক বা নারী হোক।মিষ্টি কথা দিয়ে মন জয় করার তার নেইকো জুড়ি।যেকোনো মানসিকতার মানসিকতাকে বুঝে নিতে তার সময় লাগেনা।তাই তার পরিচিত সকল মানুষের সাথেই তার ভালো সম্পর্ক।তিনি ঠান্ডা মাথার মানুষ।ঠান্ডাভাবেই যে কোনো মানুষ ও যে কোনো পরিস্থিতিকেই সামাল দিতে পারেন।তারসাথে পরিচিত মানুষের সবার কাছেই তিনি কাছের মানুষ।তিনি যেমন ভালো কথা বলতে পারেন তেমনি সমাজের মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেন।সেদিক থেকে সমাজ সেবীও বটে।তার সমাজ সেবা করার দরূণ তিনি বিভিন্ন জায়গার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেতেন এবং যেতেনও।সব জায়গাতে তার উপস্থিতি এক অন্যমাত্রা যোগ করত।পরিবেশটাও ভরা ভরা লাগত।
সোমবার দুটোর সময় ভোলানাথ বাবু বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।পেছন থেকে স্রী অরুণা দেবী ডাকতে লাগলেন কি গো না খেয়ে চলে যাচ্ছো যে।ভোলানাথ ভোলাভালাভাবেই বলতে লাগলেন ওই বাইরে খেয়ে নেব।তুমি বরং বিশ্রাম নাও।ভোলানাথের সাথে অরুণার সম্পর্ক খুব ভালো।দুজনকেই দুজনে বোঝেন।তবে কেন জানিনা ভোলানাথের স্রীর ব্যাপারে জানাতে আপত্তি বরাবরই।পরিচিতি মহলে তার স্রীর বিষয়টিকে তিনি এড়িয়ে যান।অথচ তার স্রীকে নিয়ে তার বন্ধুবান্ধবের কাছে কোনো অভিযোগ নেই।নেই চেনাপরিচিতদের কাছে কোনো নিন্দার বাহার।দুই সন্তান।একটি ছেলে ও একটি মেয়ে।মেয়ে বিয়ে হয়ে গেছে তিন বছর আগে।তখন মেয়ে কেবল তেইশ বছর।ভালো পাত্রর সন্ধান মেলায় তারাতারি করে বিয়ে দিয়েছিলো।ছেলেও পড়াশোনার কারণে বাইরে থাকেন।ফলে বাড়িতে স্বামী স্ত্রী শুধু।অরুণা দেবীর শারীরিক অসুস্থতার কারণে ভোলানাথবাবুকে রাতে সময় দিতে পারেনা।তাই ভোলানাথবাবু ও অরুণা দেবীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়না বললেই চলে।
কোনো এক বিকেলে হঠাৎ করে আড্ডা জমে বন্ধু সুরেশবাবুর সাথে।একথা সেকথা হতে হতে সুরেশবাবু দাম্পত্য জীবনের কথা জানতে চাইলে ভোলানাথবাবু বলেন শারীরিক চাহিদা বা যৌণ চাহিদা কি জিনিস তা অনেকদিন হয় ভূলে গেছি।
"চাহিদা থাকলেও খারাপ,না থাকলেও খারাপ।যৌণ চাহিদা থাকলে পূরণ না হলে তাতেও মনে ক্ষামতি ধরে,আবার শরীরের যৌণ অনুভূতি না থাকলে সহধর্মীণীর ক্ষামতি ধরে।"
যে যারটা বুঝে নেয়।কেউ আবার স্বামীর সোহাগ থেকে বঞ্চিত হলে সেই স্বামীকেই ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।ভোলানাথবাবু তার বন্ধুকে বলেন জানিস আমার জীবনে দেখা ঘটে যাওয়া ঘটনা যা আমায় ভাবিয়েছিলো "নারীরাও পুরুষদের ভোগ করে"।সুরেশবাবু জানতে চাইলে ভোলানাথবাবু বলতে শুরু করেন -
আমাদের পাড়ায় একজন স্রী তার স্বামীকে ছেড়ে চলে গেছিলেন বিয়ের ঠিক দু-মাস পড়েই।একদিন পাড়ায় দেখলাম সেই কমলবাবুর বাড়ির সামনে প্রচুর লোক,পাড়ার লোক অনেকে নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দেখছে।আমাদের বাড়ির থেকেও চিৎকারের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিলো।আমার তখন বছর তেইশ।দেখলাম কমল বাবুর বাড়ির সামনে একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে।সেই গাড়িতে ঘরের আসবাব পত্র তোলা হচ্ছে।আর কমলবাবুর দুমাসের বিবাহিত স্রী তা নোট করছেন কাগজে।আর চিৎকার করছেন সব আসবাবপত্র দেখে দেখে আনুন।
এসবের কারণ জানতে চাইলে এক পাড়ারই ছেলে বলে উঠলো "কমলবাবুর নাকি নেই"।
মানে জানতে চাইলে সেই ছেলে বলে আরে পুরুষত্ব নেই।তাই কমলবাবুর স্রী বিমলা দেবী আইনি নোটিশ করেছিলেন এক সপ্তাহ পরেই।কথায় আছে-
পুরুষরা ভোগ করে।
কিন্তু ভোগতো নারীও করে।পুরুষরা মেনে নেবেনা বা মেনে নিতে পারেনা।কখনও হয়তো ভেবেও দেখেনি।
আর নারীরাও হয়তো জানেনা যে নারীরাও ভোগ করে।
আসলে প্রাপ্যটা সবাই বোঝে। আসলে কেউ নিজেকে বীর দেখাতে চায়,আর কেউ নারীত্ব প্রমাণে ব্যস্ত।
আসলে ভোলানাথবাবু এই চরম বাস্তবকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন অনেক বন্ধুকে।কিন্তু কেউতা বোঝার বা মানার চেষ্টা করেননি।অনেক ভোলানাথের বুদ্ধির ভিম্রতি হয়েছে বলে মনে করেছেন।
কিন্তু ভোলানাথ এই শুনেও থেমে থাকেনি।তিনি রীতিমতো সমাজে খোঁজার চেষ্টা করত।আর দেখত হ্যাঁ নারীরাও ভোগ করে।তারাও যৌবনের স্বাদ বুঝতে চায়।
কিন্তু সব দোষ গিয়ে পড়ে পুরুষের উপর।কারণ সমাজে ধর্ষণের ঘটনা ঘটায় পুরুষরা।তাই নারীদের প্রতি অত্যাচারের দায়ে পুরুষরাই দায়ী।সেদিক থেকে পুরুষদের গায়ে তকমা লাগে বেশি।কিন্তু পরস্ত্রীকাতরতার কারণে অনেক পুরুষকে দেখা যায় অন্য নারীর সাথে অবৈধভাবে সম্পর্কে যেতে।সেক্ষেত্রে শুধুই পুরুষ ভোগ করেকি নারীকে?নারী ভোগ করেনা নাকি শুধুই ভোগ হয়?যদি আমরা এর উত্তর বা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাবো যে নারীরাও পরকিয়ায় জড়িত হয় তার সাধ মেটানোর জন্য।তাহলে নারীরা কিভাবে ভোগ করলনা বল!
সুরেশবাবু এবার বলে উঠল অনেক শুনলাম, অনেক গপ্পো হোলো, আজ যাইরে আবার গপ্পো হবে,অন্যদিন আড্ডা হবে জমিয়ে।আজ তবে চলি।ভোলানাথও চলি বলে হাটা শুরু করল।
ভোলানাথ ফোন করে সুমিকে।সুমি ভোলানাথের থেকে আঠারো বছরের ছোটো।তবুও তাদের মধ্যে এক নিদারুণ বন্ধুত্ব।ভোলানাথবাবুকে সব বিষয়ে সহযোগিতা করে।তাই ভোলানাথবাবুও সুমিকে ভীষণ পছন্দ করে।সব জায়গায় সাথে নিয়ে যায়।অর্থাৎ কোনো অনুষ্ঠান যেখানে পাশে রাখা যায় সেখানে পাশে রাখবেই।তাই দুজনে দুজনকে তুমি বলে সম্বোধন করে।
সুমি প্রতিদিন খোঁজও নেয় সময় ও নিয়ম করে।এক ভাব ভালোবাসাও যেন কোথাও আছে তাদের মধ্যে।
কিন্তু সেটা কি তারা বুঝতে পারেনা।তবে দুজন দুজেনর
প্রয়োজন ও দুজন দুজনার বিশ্বস্ত।ভোলানাথবাবুর যে আর কারও সাথে কোনো যোগাযোগ নেই সেটা নয়,অনেক নারীর সাথে যোগাযোগ আছে তবে সেগুলি শুধুই বন্ধুত্বমাত্র।কাজের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো।তবে একটু আধটু রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়না তা নয়।সুযোগ পেলে ঘোরাঘুরিও চলে।তবে সবার কাছেই বৌয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকে।বৌয়ের তার সাথে ভালো সম্পর্ক।
স্বামীর প্রতি অগাধ বিশ্বাস অরুণা দেবীর। স্রী অরুণা স্বামীর চাহিদা পূরণে ব্যর্থ জন্য মেনে নেয় অন্য নারীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ।তবে তিনি তার স্বামীর প্রতি দায়িত্ব পালনে বিন্দুমাত্র ত্রুটি রাখেনা।ভোলানাথবাবুর পছন্দে চলতে পছন্দ,সব জায়গাতেই স্বামী ভোলানাথবাবুর সাথে যাওয়া পছন্দ ও পোশাকও পরেন স্বামীর পছন্দে।তাই স্রীর প্রতিও সমানভাবে স্নেহশীল।তিনি মানেন "বান্ধবীর জায়গায় বান্ধবী" আর "স্রীর জায়গায় স্রী"। তাই তার জীবনে অনেক পলাশ, রজনীগন্ধা থাকলেও তার জীবনে তার "স্রী" ফাল্গুন।
_________________
ليست هناك تعليقات:
إرسال تعليق