الأربعاء، 15 مايو 2024

গল্প: বিড়াল ছানা, কলমে: প্রিয়াংকা নিয়োগী, ♥️ কোচবিহার,ভারত তারিখ:১৪.০৫.২০২৪

 গল্পগল্প: বিড়াল ছানা,

কলমে: প্রিয়াংকা নিয়োগী, ♥️ 

কোচবিহার,ভারত

তারিখ:১৪.০৫.২০২৪


______________________

তিরতি অফিস থেকে এসে নিজের রুমে ঢুকছে, কানে আওয়াজ এলো রুমে যেওনা বিড়াল বাচ্চা দিয়েছে। তিরতির মা বলছে একথা।তিরতিও কথা না বাড়িয়ে অন্যরুমে চলে যায়।না তাদের বাড়িতে এ নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি,কেউ রেগে যায়নি।এদিকে তিরতির বাবা সমস্ত দরজা খুলে রেখেছে,যাতে বিড়াল তার ছানাদের নিয়ে যায়।বিড়ালনি তিনটি ছানা দিয়েছে।ঘুম থেকে উঠে তিরতিরা দেখল বিড়ালনি দুটো শিশুকে নিয়ে গিয়েছে আর একটি শিশুকে রেখে গিয়েছে।সেই ষোলো 

ঘন্টা বয়সের শিশুটি একা একা ঘর থেকে বেড়িয়ে তার 

মা কে খুঁজছে আর কাঁদছে।এমন অবস্থায় তিরতিরের মা রুক্মিণী দেবী তার স্বামীকে বললেন বিড়ালের শিশুটাকে খাওয়াতে হবে,তাই একটা বাট কিনে আনো।

সাথে সাথেই তিরতির বাবা বাট কিনতে গেলো।

এদিকে তিরতির শিশুকে জল খাওয়াবে বললে রুক্মিণী দেবী বলেন এখন না তোর বাবা এলে দুধ ও জল ভালো করে মিশিয়ে খাওয়াবো।এই কথা বলার দশ মিনিট পর তিরতির বাবা বাড়িতে আসে বাট নিয়ে।

রুক্মিণী দেবী দুধ ও জল ভালো করে মিশিয়ে দেয় যাতে বিড়ালের শিশুটার কোনো অসুবিধা না হয়।খেয়ে তৃপ্তি পায়।রুক্মিণী দেবী সেই করাটা অন্তর থেকেই করলেন।

একটি বাচ্চার মা হিসেবেই করলেন।তিরতির বাবাকে দিলেন দুধের বাটিটা।তিরতির বাবা দুধের বাটি এবং বাটটাকে রেখে একটি তোয়ালা রুমাল নিয়ে শিশুটাকে ধরতে গেলেন।শিশুটাকে ধরে একদম মানুষের বাচ্চার মতো রুমালে প্যাচালো।ঠিক যেভাবে মানুষের শিশুকে

তোয়ালা দিয়ে প্যাচানো হয়।এরপর বিড়ালের শিশুটিকে ঠিক সেভাবেই দুধ খাওয়ালো তিরতির বাবা যেভাবে মানুষের শিশুকে খাওয়ানো হয়।বিড়ালের শিশুটি যখন অনুভব করল কারো আদর মাখা ও আদর ভরা হাতের মধ্যে আছে তখন সে চুপ হয়ে যায়।আসলে বিড়ালের শিশুটি অনুভব করছিলো কেউ তার সাথে আছে,সে একা নয়।দুধ খাওয়ানোর পর তিরতির বাবা বুকের সামনে রুমালে প্যাচানো অবস্হায় বিড়াল শিশুটিকে ঠিক মানুষের শিশুর মতোই হাল্কা দুলিয়ে দুলিয়ে আদর করছে।বিড়ালের বাচ্চাটি কিন্তু একদম চুপ আদর পেয়ে।আদর খেতে খেতে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর বিড়াল শিশুটিকে সেভাবেই একটি সব্জি ব্যাগের মধ্যে রেখে দেয়,বিড়াল শিশুটি যাতে আরামে ও নিরাপদে থাকে সেজন্যে যে ঘরে জন্মেছিলো সে ঘরে একটি তক্তার উপর ব্যাগটি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।তারপর তিরতির বাবা বাইরে বেড়িয়ে এসে কাজ করতে থাকলে পাঁচ মিনিট পর বিড়ালনি এসে কাঁদতে কাঁদতে বড়োঘরের দরজার দিকে দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে গেলে তিরতির বাবা মাসহ সবাই বুঝতে পারে যে বিড়ালনী তার শিশুকে নিতে এসেছে।বিড়ালনী কিন্তু একাই এসেছে।বিড়ালনী বড়োঘরে ঢুকেই সোজা রওনা দিলো সেই ঘরে যাওয়ার জন্য যে‌ ঘরে বাচ্চাগুলোকে প্রসব করেছেন।বিড়ালনির পেছনে পেছনে তিরতির বাবাও গেলো শিশুটিকে দিয়ে দেওয়ার জন্য।বিড়ালনী প্রসব ঘরে গিয়ে তার সন্তানকে খুঁজতে থাকলে তিরতির বাবা ব্যাগ থেকে শিশুটিকে বের করে নিচে ছেড়ে দেয়।তাতে বিড়াল শিশুটির ঘুম ভেঙে যায়।বিড়ালনী শিশুটিকে দেখতে পেয়ে তার কাছে যায়।শিশুটিও মাকে পেয়ে আপ্লুত।তারপর তারা সামনের দরজা দিয়ে চলে যায়।


         এই সমস্ত কিছু চোখের সামনে হতে দেখে তিরতি অনুভব করল মা মা-ই হয়।এও অনুভব করল একজন মা তার সন্তান সুস্থভাবে ভুমিষ্ঠ হওয়ার জন্য একটি ভালো জায়গা বেঁছে নিলো যাতে সন্তান নিরাপদ স্থানে প্রসব হতে পারে ও সুস্থ থাকে।মানুষ পুয়াতি হলে তাকে নিয়ে সবার চিন্তা থাকে,তাকে প্রসবের সময় কোন হসপিটাল,কোন নার্সিং হোমে রাখা হবে। মানুষ পুয়াতী অবস্থায় তার অবস্থার কথা যে কাউকে বলতে পারে। কিন্তু বিড়াল,কুকুর,ছাগল ইত্যাদি তারা তাদের কথা কাউকে বলতে পারেনা।এমনকি প্রসব  যন্ত্রণার সময় নিজেকেই বুঝে নিতে হয় এবং নিজেকেই প্রসব জায়গা খুঁজে নিতে হয় এদেরকে।অথচ কত মুখ ঝ্যামটাই যে পেতে হয় তাদের।কারণ তারা পশু।তাদের নারীত্বের প্রসব যন্ত্রণার অধ্যায় বোঝার মতো বুঝ এখন পর্যন্ত কোনো নারীদেরতো হয়নি তারসাথে কারোই হয়নি।তিরতি গভীরভাবে ভাবলেন সেইসব পশু নারীদের কথা,যারা প্রসব যন্ত্রণার লড়াইটা একাই লড়ে।


             মাতৃত্ব কি দারুন জিনিস।একটি "নারী পশু" না বলতে পারে,না মানুষের মতো ঠিক করে বুঝতে পারে।

অথচ সন্তান সত্ত্বা অনুভবের জায়গাটা অগাধ।মা প্রমাণ করে মা মা-ই হয়। গর্ভবতী ও মাতৃত্বস্বাধ সব নারীদের জন্যই এক, সে মানুষ কিংবা পশু হোক।


              তাই তিরতি সিদ্ধান্ত নিলো সামনের রবিবার তার এলাকা জুড়ে প্রচার চালাবে যাতে "কোনো পুয়াতি পশু প্রসব করলে তাকে  জানামাত্রই তাড়িয়ে না দেওয়া হয় বা ঝ্যামটা না দেওয়া হয় ।আর পুয়াতি পশুদের যেন কেউ ঢেল না দেয়"। তারপর অফিসে চলে যায়।অফিস থেকে ফিরে জানতে পারে বিড়ালনি দুপুর তিনটের দিকে আরও একবার এসেছিলেন তার আরও কোনো সন্তান রয়েছে কিনা খোঁজ করতে।ঐ সন্তান‌ প্রসবকারী বিড়ালনীকে দেখে রুক্মিণী দেবী একটি বাটির মধ্যে ভাত খেতে দেন।আর কোনো সন্তান নেই বুঝতে পেরে বিড়ালনি না খেয়ে চলে যান।আসলে বিড়ালনিতো খেতে 

আসেনি,এসেছিলো সন্তান খোঁজ করতে।তাই খাবার দেখেও ধারের কাছে ঘেঁষে নি।


           এদিকে তিরতি সিদ্ধান্তমতো ঠিক রবিবার বেড়িয়ে গেলো চারজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে।তারা প্রচার করলেন পুরো এলাকায়- "নারী পশুদের" মাতৃত্বকালীন অবস্থায় সাথ দিন, বাচ্চা ভূমিষ্ঠ অবস্থায় কোনো পশুকে আপনার ঘরে দেখতে পেলে তার প্রতি রেগে যাবেননা।


                          ___________________



ليست هناك تعليقات:

إرسال تعليق